উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর আসতে আসতে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও এখনো নিম্নাঞ্চল প্লাবিত অবস্থায় আছে। লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুই তীরে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন।
সেই সাথে প্লাবিত এলাকার মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে জন দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, যা স্বাভাবিকের (৫২ দশমিক ৬০ সেমি) চেয়ে ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল বুধবার দিনভর বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহের ফলে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ ভারতের গজল ডোবার গেট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম দিয়ে পানি প্রবেশ করে তিস্তা ব্যারাজে।
ফলে তিস্তা তীরবর্তী প্লাবিত এলাকা পানি নেমে যাওয়ার জন্য ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু প্রবল স্রোতে ও পানির চাপে তিস্তার ‘ফ্লাড বাইপাস’ সড়কটি ভেঙে যায়। পরে ৪৪ গেট খুলে দেয় ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ । আর এই পানি লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় তিস্তার চরাঞ্চল ও বামতীরের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলো। এতে ডুবে যায় কৃষকের ফসল,মাছের ঘের।
দিনভর পানিতে ডুবে থাকার পর ভোর থেকে পুনরায় পানি কমতে শুরু করে। তবে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধাসহ পাটগ্রামের দহগ্রামে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
তিস্তার প্রবল স্রোতে লালমনিরহাটে কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা-রংপুর সংযোগ সড়কের পাকার রাস্তা ধসে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে দুই জেলার সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুই পাশে হাজার হাজার মানুষসহ যানবাহন আটকে পড়ে গেছে। ভাঙনকবলিত মানুষেরা বলেন, প্রতিবছর তিস্তার পানি বেড়ে ঘর বাড়িসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শুধু আশ্বাস দিয়ে রাখছে তিস্তাপাড়ের মানুষদের। এভাবে আর কত দিন তিস্তাপাড়ের মানুষরা কষ্টে থাকবে? লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল (বুধবার) ভোর থেকে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছিলো। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কিছু গেট বন্ধ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে আবারও পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।